সিলেটের আদালত প্রাঙ্গনে মব সৃষ্টি করে হামলার অভিযোগ
১৯ অক্টো ২০২৫, ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট
সিলেটের আদালত প্রাঙ্গনে মব সৃষ্টি করে হামলার অভিযোগ করেছেন মো. সুহেদ আলী। তিনি দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার মো. আকল আলী ছেলে। গত বৃহস্পতিবার সিলেটের আদালত প্রাঙ্গনে এ ঘটনা ঘটে।
দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার বাসিন্দা কাজী আবদুল ওয়াদুদ আলফুর বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার অভিযোগ উঠেছে, তিনি আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ হেফাজতে থেকে এক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছেন এবং এক সাংবাদিকের মুঠোফোন কেড়ে ভেঙে ফেলেছেন; একই সময়ে ওয়াদুদের ছেলে বায়োজিদ আরেক সাংবাদিকের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও মুছে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইমজা নিউজ নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল সাংবাদিক নয়ন সরকার এবং আরেকটি অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক বিশাল দে। এছাড়াও বিকেলে আসামি আলফুকে হাজতখানা থেকে প্রিজন ভ্যানে নিয়ে যাওয়ার সময়ও আসামির লোকজন সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন এবং মারধর করারও অভিযোগ করেছেন। এ সময় আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। ঢালাওভাবে সংবাদও প্রকাশ করা হচ্ছে এসব নিয়ে। এই ঘটনার সময় আদালত প্রাঙ্গনে সিলেটের অনেক সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি তারা দেখেছেন। তবে তারা অদৃশ্য কারণে এসব নিয়ে কেউই মুখ খুলছেন না! এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং টিভি চ্যানেলে যারাই বক্তব্য দিয়েছেন তারা সবাই সিলেটের টিভি চ্যানেল সংগঠন ইমজা’র সদস্য।
আদালতে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি এ ঘঠনা পরিকল্পিত। তাদের দাবি, বৃহস্পতিবার দুপুরে রিমান্ড শুনানির জন্য আবদুল ওয়াদুদকে সিলেট আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত ভবনের চতুর্থ তলা থেকে তাঁকে হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছিল। ওই মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করছিলেন কয়েকজন সাংবাদিক। এ সময় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় তিনি ইমজা নিউজের সাংবাদিক নয়ন সরকারের মুঠোফোনটি কেড়ে নেন আলফু। অন্যদিকে আরেকটি অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক বিশাল দের মুঠোফোন কেড়ে নেন ওয়াদুদের ছেলে কাজী বায়জিদ আহমেদ। পরে বিশালের মুঠোফোনে থাকা ভিডিও চিত্রটি মুছে সেটি আবার ফিরিয়ে দেন বায়জিদ। এ সময় মব সৃষ্টি করা হয়।অন্য সাংবাদিকেরা এগিয়ে গেলে তাঁদের সঙ্গেও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
প্রশ্ন এখানেই- এতসব ঘটনা ঘটলো, এখানে উপস্থিত ছিলেন অনেক সাংবাদিক। পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় তিনি ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক নয়ন সরকারের মুঠোফোনটি কেড়ে নেন এবং ভেঙে ফেলেন, এই ভিডিওটি কোথায়?
অন্যদিকে আরেকটি অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক বিশাল দের মুঠোফোন কেড়ে নেন ওয়াদুদের ছেলে কাজী বায়জিদ আহমেদ।পরে বিশালের মুঠোফোনে থাকা ভিডিও চিত্রটি মুছে সেটি আবার ফিরিয়ে দেন বায়জিদ। এই ঘটনারও ভিডিওটি কোথায়?
ঘটনাস্থলে এতো সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকলেও এই ভিডিওটি কেনইবা কেউ প্রকাশ করেন নি? উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে মব সৃষ্টি করে এই ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিক জানান, বেলা আড়াইটার দিকে আসামিকে হাজতখানা থেকে প্রিজন ভ্যানে নিয়ে যাওয়ার সময়ও আসামির লোকজন সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনা মিথ্যা। উল্টো সেই সময়ে কয়েকজন সাংবাদিক দক্ষিন সুরমার একজন লোক সুয়েদ আলীকে আদালত পাড়ায় প্রকাশ্যে মারধর করেন। সেই সময়ে ডেইলি স্টারের সাংবাদিক নাসির এবং সাংবাদিক আশরাফ তাকে এই মারধর থেকে রক্ষা করেন। বিকেলে আমি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং ফেসবুকে দেখি মারধরের এই ফুটেজটি প্রকাশ হচ্ছে ২য় দফায় আলফুর লোকেরা হামলা করেছে বলে প্রকাশ করা হয়েছে! কিছু লোক তাদের নিজেদের স্বার্থে ইমজা সংগঠনকে বিতর্কিত করছে।
এই বিষয়টি সিনিয়র অনেক সাংবাদিকরা দেখলেও কেউ প্রতিবাদ করেন নি। তবে সিলেটের একজন সিনিয়র সাংবাদিক বাবর হোসেন। যিনি সাদা কে সাদা বলেন, কালো কে কালো। তার ফেসবুক আইডি তে এই বিষয় নিয়ে একটি পোস্টের মাধ্যমে জাতির সামনে প্রশ্ন ছুড়েছেন – আজকের আদালতের ঘটনার লীজ কে নিলেন ইমজার কেউ জানেন কি : আলফু..
তার এই পোস্টে মন্তব্য এসেছে অনেক। সিনিয়র সাংবাদিক খলিল লিখেছেন, পুলিশ হেফাজতে হাতকড়া পরা আলফু মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিল, কিন্তু পরক্ষণে মোবাইল ফোনটা কোথায় গেল? এর বর্ণনা নিউজে নেই। আলফু চোরাই মোবাইল ফোন সাথে নিয়ে রিমান্ডে? ইমজার ঘটনা, ইমজার কেউই নেবেন!
জাকির হোসেন সুমন নামক একজন মন্তব্য করেছেন- শুনেছি আজকে আলফুর বিরোধিতা করার জন্য অন্য এক পক্ষ লক্ষ টাকা ঢেলেছে।
সিনিয়র সাংবাদিক মো. আব্দুল আলীম সাগর লিখেছেন- শুনলাম দুই সাংবাদিক আজকের ঘটনার ঠিকাদার।
অপরদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, ইমজা নিউজ নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল আবদুল ওয়াদুদ গংদের নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেছে। আলফুর ছেলে বায়োজিদ এইসব মামলা দেখাশুনা করছে। আলফুর স্ত্রী অসুস্থ। তিনি নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আলফুর ছেলে যাতে মামলা পরিচালনা না করতে পারে এজন্য কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বহিস্কৃত বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন তার লোকদের মাধ্যমে আদালত প্রাঙ্গনে পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। আবদুল ওয়াদুদ সাদাপাথর ও বালু লুট, হত্যা, ছাত্র আন্দোলনে হামলাসহ ১৯টি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং একই উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, দুপুরে রিমান্ড শুনানির জন্য আবদুল ওয়াদুদকে সিলেট আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত ভবনের চতুর্থ তলা থেকে তাঁকে হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছিল। ওই মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করছিলেন কয়েকজন সাংবাদিক। এ সময় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় তিনি ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক নয়ন সরকারের মুঠোফোনটি কেড়ে নেন। অন্যদিকে আরেকটি অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক বিশাল দের মুঠোফোন কেড়ে নেন ওয়াদুদের ছেলে কাজী বায়জিদ আহমেদ। পরে বিশালের মুঠোফোনে থাকা ভিডিও চিত্রটি মুছে সেটি আবার ফিরিয়ে দেন বায়জিদ।
এ ঘটনার সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নয়ন সরকার বলেন, মুঠোফোনটি নেওয়ার সময় পুলিশ নীরব ভূমিকায় ছিল। তাঁর মুঠোফোনটি আসামি ভেঙে ফেলেছেন। পরে বেলা আড়াইটার দিকে আসামিকে হাজতখানা থেকে প্রিজন ভ্যানে নিয়ে যাওয়ার সময়ও আসামির লোকজন সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। এ সময় আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে সিলেট আদালত পুলিশের পরিদর্শক জামশেদ আলম বলেন, সাংবাদিকেরা অনেকটা কাছ থেকে আসামির ছবি তুলছিলেন। এ সময় অন্য সাংবাদিকেরা এগিয়ে গেলে তাঁদের সঙ্গেও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ফ্লোরে পরে ভেযে যায়।
এঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আবদুল ওয়াদুদ আলফু সহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। হামলার শিকার ইমজা নিউজের সাংবাদিক নয়ন সরকার বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সুহেদ আলী জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আমি আমার জরুরি কাজে কোর্টে গিয়ে ছিলাম। সেখানে গিয়ে লোক মুখে শুনতে পেলাম আমাদের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দির বাসিন্দা শালিশী ব্যক্তিত্ব কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু মিয়াকে কোর্টে হাজির করা হয়েছে। আমার কাজ শেষে দুুপুরে সেখানে যাই। সেখানে গিয়ে শুনতে পেলাম আব্দুল ওয়াদুদ আলফু সাহেবের বিরুদ্ধে কিছু সাংবাদিকরা অভিযোগ তুলেছেন তিনি আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ হেফাজতে থেকে এক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছেন এবং এক সাংবাদিকের মুঠোফোন কেড়ে ভেঙে ফেলেছেন; একই সময়ে ওয়াদুদের ছেলে বায়োজিদ আরেক সাংবাদিকের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও মুছে দিয়েছেন। আমি একজন এলাকাবাসী হিসেবে তাকে সেখানে দেখতে যাই। আসার সময় তারা আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায়।