“নাম্বার প্লেট, লাইসেন্স ও রোডম্যাপ ছাড়া নগর শৃঙ্খলা সম্ভব নয়”
১১ অক্টো ২০২৫, ০৩:৫৩ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটে প্রায় ১২ বছর ধরে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা খাতে যুক্ত মালিকরা সুস্পষ্ট নীতিমালা, রোড পারমিট, লাইসেন্স এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মালিক ও চালক প্রতিনিধিরা। সম্প্রতি সিলেট মহানগরীতে পরিচালিত অভিযানে প্রায় দুই হাজার ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা জব্দের ঘটনায় মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা।
বাংলাদেশ মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিএমজেএ) সিলেট বিভাগীয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, জব্দ হওয়া এসব গাড়ির মালিকরা অনেকেই ঋণ, কিস্তি কিংবা প্রবাসে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এই ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। আকস্মিক অভিযানের ফলে বহু পরিবার অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন, সন্তানের পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তারা দাবি জানান- জব্দকৃত যানবাহনগুলো অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে এবং মালিক ও চালকদের চলমান ঋণ পরিশোধ ও ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির জন্য অন্তত এক থেকে দেড় বছরের সময় দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও গ্যারেজ পুনঃসংযোগেরও দাবি জানানো হয়।
বক্তারা আরও বলেন, তারা অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বা অনিয়মের পক্ষে নন। বরং সরকারের অনুমতি ও নিয়ন্ত্রণের আওতায় থেকেই সুশৃঙ্খলভাবে পরিবহন খাত পরিচালনা করতে চান। ১৮ বছরের নিচে কাউকে ড্রাইভিংয়ে নিয়োগ না দেওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া যানবাহন হস্তান্তর না করা এবং প্রয়োজন হলে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে সিলেটে প্রায় ৩০-৪০ হাজার ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা রয়েছে। দেশের অন্যান্য জেলার মতো সিলেটেও নাম্বার প্লেট ব্যবস্থা চালু করা গেলে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
বক্তারা বলেন, যদি প্রশাসন এই যানবাহন অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তবে ধাপে ধাপে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে তা করতে হবে। একদিনে সব উচ্ছেদ করলে লাখো মানুষের পরিবার জীবিকার সংকটে পড়বে। তাই বিকল্প কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন বা আয়ের ব্যবস্থা ছাড়া এ ধরনের অভিযান মানবিক বা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
তারা আরও জানান, এই খাতে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় দুই লক্ষ মানুষ জড়িত। এরা সিলেট সিটি করপোরেশনের ভোটার ও নাগরিক। তাদের বাদ দিয়ে উন্নয়ন, পরিচ্ছন্ন নগর গঠন বা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
সমাপনী বক্তব্যে মালিক প্রতিনিধিরা বলেন, “আমরা অবৈধ যান চলাচলের পক্ষে নই, সংঘাত নয় বরং সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাধান চাই। আইন মেনে, সরকারের অনুমোদন নিয়ে, মানবিক বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। আমরা একটি সুশৃঙ্খল, পরিচ্ছন্ন ও মানবিক সিলেট গড়তে প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।”