আধুনিক স্বৈরতন্ত্র ও শেখ হাসিনার ১৬ বছর
২৭ জুলা ২০২৫, ০২:১১ অপরাহ্ণ

আধুনিক বিশ্বে শাসনের ধরন অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। অতীতে যেখানে স্বৈরতন্ত্র ছিল প্রকাশ্য ও প্রত্যক্ষ, এখন ছদ্মবেশে, তথাকথিত উন্নয়ন ও জাতীয় স্বার্থের নামে আবৃত থাকে। একে বলা যায় ‘উন্নয়নের মুখোশে স্বৈরাচার’ বা ‘আধুনিক স্বৈরতন্ত্র’। এই শাসনব্যবস্থায় বাহ্যিকভাবে রাষ্ট্র উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে প্রচার করা হয়।
শেখ হাসিনার আমলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে বিরোধী রাজনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন দমনমূলক আইন ব্যবহার করে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজকে ভয় দেখানো হয়েছে। গুম, খুন, পুলিশি নির্যাতন ও রাজনৈতিক মামলার মাধ্যমে বিরোধী কণ্ঠ চেপে ধরা হয়েছে। সরকারঘেঁষা মিডিয়া মালিকানার পাশাপাশি প্রচলিত এবং অনলাইন মিডিয়া ভয়, চাপ ও নিয়ন্ত্রণের শিকারে পরিণত হয়েছে। সাংবাদিকরা আত্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়েছিল। বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্র ক্রমেই সংকুচিত হয়েছে। ‘প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স’-এ বাংলাদেশের অবস্থান দিন দিন নিচে নেমেছে।
শেখ হাসিনা উন্নয়নের গালভরা ভাষা ব্যবহার করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনকে বৈধতা দিয়েছেন। উন্নয়ন হয়েছে; কিন্তু সেই উন্নয়ন হয়েছে মানুষের মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক অধিকারকে গলা টিপে ধরে। উন্নয়নের এই মডেল এক ধরনের ‘অথরিটারিয়ান ডেভেলপমেন্টালিজম’ যেটি চীন বা রাশিয়ার শাসনের মতো। শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মধ্যে সীমারেখা মুছে ফেলেন। তিনি মনে করতেন রাষ্ট্র মানেই আওয়ামী লীগ। প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, পুলিশ ও সামরিক কাঠামোতে ‘দলীয় আনুগত্য’ প্রধান হয়ে উঠেছে। এতে করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গণতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষার পরিবর্তে ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ রক্ষার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে যে শাসনব্যবস্থা চালু করেছেন, সেটি আধুনিক স্বৈরতন্ত্রের মডেল। উন্নয়নের আবরণে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল তার সময়ে। এই মডেল সাময়িক স্থিতিশীলতা দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রের ভেতরে ফাটল ধরায়। গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক বৈচিত্র্যের জায়গা না থাকলে একদিন সেই উন্নয়নও ভেস্তে পড়ে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে সবচেয়ে কঠোর বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের মতপ্রকাশ, নাগরিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক বিরোধিতার ক্ষেত্র অনেক বেশি সংকুচিত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো বহুমাত্রিক সমাজে এইধরনের কঠোরতা জাতীয় ঐক্য আনতে পারেনি।জনগণের অধিকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিশ্চিৎ অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র গঠন-এটাই হতে পারে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার পথ।
মো মনির হোসেন
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
monirece.siu@gmail.com