নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সিলেটের ছাত্রনেতা শফিকুর রহমান, করছেন বার বার দেশ ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা

Daily Ajker Sylhet

admin

২০ আগ ২০২৩, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ণ


নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সিলেটের ছাত্রনেতা শফিকুর রহমান, করছেন বার বার দেশ ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

সিলেটের পরিচিত ছাত্রনেতা এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক চাপ, দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিদেশে আশ্রয় ও নিরাপদ পরিবেশ খুঁজছেন।

তিনি মহানগর ছাত্রদলের দায়িত্ব পালনসহ কেন্দ্রীয় তরুণ প্রজন্ম দলের সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং সিলেট মহানগর তরুণ প্রজন্ম দলের ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। পরিবার জানায়, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলীয় কোন্দল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির আশঙ্কায় তিনি দেশে নিরাপদভাবে থাকতে পারছেন না।

পরিবারের দাবি, বিরোধী ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কারণে শফিকুর রহমান নিয়মিত চাপ ও নজরদারির মধ্যে আছেন। রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আতঙ্ক তাকে দেশে এবং বিদেশে নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়। এই পরিস্থিতির মধ্যেই তিনি নিরাপদ আশ্রয় ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করেন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও তার স্টুডেন্ট ভিসা চারবার বাতিল হয়। পরিবার জানায়, ইন্টারভিউতে রাজনৈতিক বাস্তবতা ও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে তিনি মানসিকভাবে চাপে ছিলেন, ফলে তার বক্তব্য আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উপস্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে। মার্কিন ভিসা আইন ২১৪(বি)–এর আওতাতে তার আবেদনগুলো বাতিল করা হয়।

এর আগে তিনি স্বল্পমেয়াদি সফরে ভারত যান। পরিবার জানায়, সফরের উদ্দেশ্য ছিল দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে সাময়িকভাবে দূরে থাকা এবং তুলনামূলক নিরাপদ পরিবেশে অবস্থান করা।

পরবর্তীতে ১০ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে তিনি ভারতের আসামের The Assam Royal Global University–তে B.Tech in Civil Engineering প্রোগ্রামে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ নিয়ে যোগ দিতে আবার ভারত যান। কিন্তু আসামে পৌঁছে তিনি নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করেন। স্থানীয় পরিবেশের সংবেদনশীলতা এবং রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ পেলে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে—এমন আশঙ্কায় তিনি মাত্র চার দিনের মধ্যে, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

পরিবার জানায়, ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্কও তার নিরাপত্তা–ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া আওয়ামিলীগ সরকারের সাথে ভারতের সরকারের একটি রাজনৈতিক সু-সম্পর্ক আছে।

শফিকুর রহমান অতীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। এর ফলে দলীয় অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা ও বিরোধের মধ্যেও তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন।

দেশে ফিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে ওঠায় তিনি এক পর্যায়ে আত্মগোপনে চলে যান। পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিনের এই চাপ, ভয় এবং অনিশ্চয়তা তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিদেশ–সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এই সব বাধা সত্ত্বেও তিনি বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান।

শফিকুর রহমান জানান, “আমি কাউকে ক্ষতি করতে চাই না। শুধু নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যই বারবার দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছি। বর্তমানে আমি যুক্তরাজ্যে যাওয়ার চেষ্টা করছি, কারণ সেখানে নিজেকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করছি।

তিনি বলেন, দেশে এখন আমার জন্য বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে গেছে।” পরিবারের দাবি, শফিকুর রহমান বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিদেশে আশ্রয় নেওয়াটাই তার জন্য সবচেয়ে উত্তম।